একসময়, একটি গোপন বাগান ছিল, যেখানে ফুলেরা রংধনুর মতো ঝলমলে আলো ছড়াত, আর ঘাসেরা যেন নরম সবুজ কার্পেটের মতো ছিল। এই বাগানে ছিল একটি ছোট্ট কুটির, আর সেই কুটিরটির নিচে বাস করত মপ, একটি অদ্ভুতদর্শন, নীল রঙের, তুলতুলে একটা দানব। মপের শরীরটা ছিল নরম কম্বলের মতো, আর সে কথা বলতে পারত ১২টি ভাষায়! মপ আন্ডারবেডে থাকত, তবে সে কেবল বালিশ ফুলিয়ে দিত, আর মজার মজার ঘুমপাড়ানি গল্প শোনাত।
একদিন, অ্যামেলিয়া আর গাব্রিয়েলা নামের দুটি মিষ্টি মেয়ে, যারা প্রায়ই বাগানে খেলতে আসত, সেই বাগানে প্রবেশ করল। অ্যামেলিয়ার ঘোড়া খুব পছন্দ ছিল, আর সে জাদু ভালোবাসত। গাব্রিয়েলার নাচতে আর গান করতে ভালো লাগত। তারা দুজনেই ছিল খুব কৌতূহলী।
একদিন, তারা বাগানে খেলছিল, আর হঠাৎই তাদের চোখে পড়ল একটা দরজা, যা আগে তারা দেখেনি। দরজাটা ছিল ঝোপঝাড়ের আড়ালে লুকানো। দরজাটা সোনার মতো দেখতে ছিল, আর তার উপরে কিছু সুন্দর কারুকার্য করা ছিল।
“ওই দিকে চল না, দিদি?” গাব্রিয়েলা বলল, তার মিষ্টি গলায়।
অ্যামেলিয়া রাজি হলো, “হ্যাঁ, চলো যাই!”
তারা দরজাটির কাছে গেল, দরজাটি খুলল, আর তারা দেখল এক নতুন জগৎ। তারা দেখল মপকে, যে নরম নীল শরীর নিয়ে হাসিমুখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
“তোমরা কি এখানে খেলা করতে চাও?” মপ বলল, তার নরম গলায়। “আমি মপ, আর আমি এখানে থাকি। আমি তোমাদের গল্প শোনাব, আর তোমাদের ভালো লাগবে।”

অ্যামেলিয়া আর গাব্রিয়েলা দুজনেই হেসে উঠল। মপ তাদের বলল, “এই বাগানে, যা খুশি তাই হতে পারে। তোমরা যদি চাও, তবে এখানে ইউনিকর্ন আসতে পারে, আর জাদুও হতে পারে।”
“বাহ!” গাব্রিয়েলা বলল, “তাহলে তো খুব মজা হবে!”
মপ তাদের কুটিরের ভিতরে নিয়ে গেল। সেখানে ছিল অসংখ্য বালিশ, আর তাদের মধ্যে ছিল অনেক রকমের মোজা। সাদা, কালো, ডোরাকাটা, এমনকি রংধনুর মতো মোজাও ছিল।
“আরে! এত মোজা!” অ্যামেলিয়া অবাক হয়ে বলল।
“হ্যাঁ,” মপ বলল, “এগুলো সব হারিয়ে যাওয়া মোজা। আমার কাজ হলো তাদের খুঁজে বের করা আর তাদের জোড়া মেলানো।”
“কিন্তু, মোজারা তো জোড়া ছাড়া একা একা খুব দুঃখ পায়,” গাব্রিয়েলা বলল।
মপ বলল, “ঠিক বলেছ। তাই তো আমি তাদের সাহায্য করি। কিন্তু, এখন অনেক মোজা হারিয়ে গেছে। তোমরা কি আমাকে সাহায্য করবে?”
অ্যামেলিয়া সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল। “হ্যাঁ, আমরা করব!”

গাব্রিয়েলাও রাজি হলো। “আমি গান গাইব আর নাচব, তাহলে মোজারা খুশি হবে!”
তখন তারা সবাই মিলে মোজা খুঁজতে বের হলো। তারা প্রথমে গেল বালিশের রাজ্যে। সেখানে বিশাল বিশাল বালিশের পাহাড় ছিল, আর তার মধ্যে মোজাগুলো লুকিয়ে ছিল। অ্যামেলিয়া তার জাদু দিয়ে বালিশের রাস্তা তৈরি করল, আর গাব্রিয়েলা গান গাইতে শুরু করল। তার মিষ্টি গানের সুরে মোজারা ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে লাগল।
এরপর তারা গেল মোজার গোলকধাঁধায়। সেখানে অনেক পথ ছিল, আর মোজারা এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিল। মপ তার বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে মোজাগুলোকে খুঁজে বের করতে লাগল। অ্যামেলিয়া তার ঘোড়ার জাদু ব্যবহার করে পথ খুঁজে বের করল। গাব্রিয়েলা নাচতে নাচতে মোজাগুলোকে সঠিক পথে নিয়ে এলো।
এভাবে তারা অনেক মোজা খুঁজে বের করল। তারা একে অপরের সাথে জোড়া মেলালো, আর মোজারা সবাই খুব খুশি হলো। কেউ গান গাইছিল, কেউ হাসছিল, আর কেউ বা তাদের নতুন বন্ধুদের সাথে গল্প করছিল।
অবশেষে, তারা সব হারিয়ে যাওয়া মোজা খুঁজে বের করল, আর তাদের জোড়া মেলাতে পারল। বাগান আবার আগের মতো ঝলমলে হয়ে উঠল। অ্যামেলিয়া, গাব্রিয়েলা আর মপ-এর চোখেমুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠল।
হঠাৎ, সেই সোনার দরজাটা আবার দেখা গেল। তারা বুঝল, তাদের বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে। মপ তাদের ধন্যবাদ জানাল, আর বলল, “তোমরা খুব ভালো বন্ধু। তোমরা মোজাগুলোকে সাহায্য করেছ, আর তাদের খুশি করেছ।”
অ্যামেলিয়া আর গাব্রিয়েলা হাসিমুখে মপকে বিদায় জানাল। তারা দরজা দিয়ে বাইরে এল, আর দেখল, সন্ধ্যা নেমে এসেছে। তাদের মনে হলো, তারা যেন একটু বদলে গেছে। তাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়েছে, আর তারা শিখেছে, কিভাবে অন্যদের সাহায্য করতে হয়। তারা বুঝতে পারল, সবাই মিলে কাজ করলে, অনেক কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়।
পরের দিন, তারা আবার বাগানে গেল। বাগান আগের মতোই সুন্দর ছিল, কিন্তু তাদের মনে হচ্ছিল, যেন তারা আরও বেশি কিছু দেখতে পাচ্ছে। তারা জানতে পারল, তাদের বন্ধু মপ, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে, আর তাদের নতুন মজার গল্পের অপেক্ষায় রয়েছে।