এক সময়, অনেক উপরে, যেখানে মেঘেরা খেলা করে, সেখানে ছিল ঝলমলে দ্বীপপুঞ্জ। এই দ্বীপগুলি ছিল আকাশে ভাসমান বাগান, যেখানে রংধনুর সেতুগুলি ঝলমল করত, এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যাওয়ার পথ তৈরি করত। এই দ্বীপগুলিতে, প্রত্যেক দিন শুরু হত সূর্যের মিষ্টি আলোয়, যা দ্বীপের প্রতিটি কোণে আনন্দ ছড়িয়ে দিত।
এই দ্বীপগুলির মধ্যে একটিতে বাস করত ক্লোভার, একটি গোলাপী বন-অঙ্কুর, যার পাতাগুলি সূর্যের আলোয় চিকচিক করত। ক্লোভার ছিল খুবই হাসিখুশি এবং প্রকৃতির সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক ছিল। যখন সূর্যের আলো তার পাতায় এসে লাগত, তখন সে খিলখিল করে হাসত, যেন সূর্যের কৌতুক শুনে খুব মজা পাচ্ছে। ক্লোভারের মাথায় প্রতিদিন একটি নতুন ফুল জন্মাত, যা দ্বীপের সবার কাছে খুব প্রিয় ছিল। ক্লোভার গাছপালাদের সাথে কথা বলতে পারত এবং যখন খুশি হত, তখন প্রাকৃতিক সুগন্ধি তৈরি করত, যা দ্বীপের বাতাসকে আরও মিষ্টি করে তুলত।

একদিন, দ্বীপপুঞ্জের সব আনন্দ যেন একটু ম্লান হয়ে গেল। ঝলমলে শিশির, যা দ্বীপের সবুজের প্রাণ ছিল, তা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হতে শুরু করল। এই শিশির ছিল দ্বীপের সব আনন্দের উৎস। ক্লোভার অনুভব করল দ্বীপের মন খারাপ, যেন কেউ তাদের খুশি ছিনিয়ে নিয়েছে। ক্লোভার ভাবল, "আরে, এটা কী হচ্ছে?" এবং সে জানতে চাইল কেন এমন হচ্ছে।
তখন, রং নামে একটি ছোট্ট মেয়ে ছিল, যে ছিল একজন শিল্পী এবং সুন্দর হস্তাক্ষর লিখত। রং-এর হাতে ছিল তার আঁকার সরঞ্জাম এবং সে ভালোবাসত নানা ধরনের কারুশিল্প তৈরি করতে। রং-এর প্রিয় কাজ ছিল শিশিরের ছবি আঁকা, যা সে প্রতিদিন করত। কিন্তু যখন সে দেখল শিশির অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, তখন তার মনে গভীর দুঃখ হল। সে ঠিক করল, ক্লোভারের সাথে এই রহস্যের সমাধান করবে। রং-এর বন্ধু, মেঘের ভেড়াগুলি মাঝে মাঝে এসে তার হাতের কাজে সাহায্য করত।
ক্লোভার বলল, "চলো, আমরা খুঁজে বের করি এই শিশির কোথায় যাচ্ছে!" রং রাজি হলো, "হ্যাঁ, চলো যাই!", এবং তারা তাদের যাত্রা শুরু করল। তারা রংধনুর সেতু ধরে হাঁটতে শুরু করল, আর পথে তারা অনেক মজার প্রাণী ও সমস্যার সম্মুখীন হল। তাদের প্রথম সাক্ষাৎ হল একটি কথা বলা মেঘের ভেড়ার সাথে। মেঘের ভেড়াটি বলল, "তোমরা যদি এই ধাঁধাটির উত্তর দিতে পারো, তবে আমি তোমাদের সাহায্য করব।", আর ধাঁধাটি ছিল, "আমার একটি মুখ আছে, কিন্তু আমি কথা বলতে পারি না। আমার একটি বিছানা আছে, কিন্তু আমি ঘুমাই না। আমি কে?" রং দ্রুত তার আঁকার সরঞ্জাম বের করে ফেলল এবং উত্তরটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে লাগল। রং ছবি আঁকতে খুব ভালোবাসত, কিন্তু সে চাইত না সে কারণে তার অনুপ্রেরণা কমে যাক। ক্লোভার তখন বলল, "এটা একটা নদী!" মেঘের ভেড়াটি হেসে বলল, "ঠিক বলেছ!", এবং তাদের পথ দেখিয়ে দিল।

তারা এরপর গেল একটি হাসিখুশি প্রজাপতির কাছে, যারা সূর্যের আলো ভালোবাসে। প্রজাপতিরা বলল, "আমাদের কাছে যাওয়ার আগে, তোমাদের একটি গান গাইতে হবে!", রং ও ক্লোভার গান গাইল, আর প্রজাপতিরা তাদের পথ দেখিয়ে দিল। পথে, রং তার কারুশিল্পের সরঞ্জাম ব্যবহার করে নানা ধরনের জিনিস তৈরি করতে লাগল, যা তাদের সমস্যার সমাধানে সাহায্য করল। তার আঁকা ছবিগুলিও তাদের অনেক সাহায্য করত। ক্লোভার গাছের সাথে কথা বলে জানতে পারল, ফুলেরা খুব দুঃখিত, তারা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে। ক্লোভার বলল, "তাহলে তো আমাদের জলদি কিছু করতে হবে!" তাদের যাত্রা আরও কঠিন হয়ে উঠল, কিন্তু তারা হাল ছাড়ল না।
অবশেষে, তারা একটি গোপন উপত্যকায় পৌঁছাল। সেখানে তারা দেখল, একটি কালো ছায়া শিশির শুষে নিচ্ছে। উপত্যকাটি ছিল কলহ এবং খারাপ কথায় পূর্ণ, যার কারণে শিশির অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল। রং তখন তার আঁকার সরঞ্জাম বের করল এবং সুন্দর, রঙিন ব্যানার তৈরি করল। সে সেই ব্যানারে ভালোবাসার কথা লিখল এবং সুন্দর হস্তাক্ষর দিয়ে শান্তি ও বোঝাপড়ার বার্তা দিল। ক্লোভার তার সুগন্ধি তৈরির ক্ষমতা ব্যবহার করে, সেই ছায়ার মন শান্ত করার চেষ্টা করল। ক্লোভারের মিষ্টি গন্ধে, ছায়াটির খারাপ অনুভূতি কমতে শুরু করল।
ছায়াটি ধীরে ধীরে নরম হয়ে গেল এবং তার মধ্যে থাকা সব খারাপ চিন্তা দূর হয়ে গেল। এরপর, সেই ছায়াটি আবার ঝলমলে শিশিরে পরিণত হল এবং দ্বীপগুলিতে আনন্দ ফিরে এল। রং ও ক্লোভার তাদের বন্ধুত্বের মাধ্যমে দ্বীপগুলিকে আবার আগের মতো সুন্দর করে তুলল। তারা প্রমাণ করল, ভালো চিন্তা ও সুন্দর কাজ, খারাপকে জয় করতে পারে। রং ও ক্লোভারকে নায়ক হিসেবে সম্মানিত করা হল। তারা দ্বীপের সবার জন্য একটি স্থায়ী শিল্পকর্ম তৈরি করল, যা সবসময় তাদের বন্ধুত্বের কথা মনে করিয়ে দেবে। আর এভাবেই, ঝলমলে দ্বীপপুঞ্জে শান্তি ফিরে এল, যা আজও সবার মনে আনন্দের ঢেউ তোলে। রং এবং ক্লোভার তাদের এই সুন্দর কাজটি তৈরি করার জন্য সারা জীবন মনে রাখবে, এবং তারা বুঝতে পারল যে, একসাথে কাজ করলে, যে কোনও সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।