এক ঝলমলে বরফের কুঁড়ির অভিযান (শুরু)
পোলার নামটা শোনো, পোলা! সে ছিল একটা তেরোজা রঙের ভাল্লুক, তার নীল রঙের কান ছিল, আর সে বরফের রাজ্যে বাস করত। পোলা ছিল খুবই মিশুকে আর ভালোবাসত সবার সাথে বন্ধুত্ব করতে। তার সবথেকে প্রিয় কাজ ছিল নানা আকারের বরফের ফুল তৈরি করা। তার জাদু ছিল, সে তার হাতের ছোঁয়ায় অসাধারণ সব বরফের ফুল বানাতে পারত! কেউ যদি তাকে একটা বরফের ফুল বানাতে বলত, তাহলে সে এমন এক ফুল তৈরি করত যা আগে কেউ দেখেনি।
একদিন, পোলা তার নরম, আরামদায়ক ঘরে বসে ছিল। তার ঘরটা ছিল ড্রাগন লায়ারের মধ্যে, যেখানে বরফের ঝলমলে দেওয়াল আর স্ফটিকের মতো জানালা ছিল। বাইরে, উত্তর মেরুর আলো ঝলমল করছিল, যেন আকাশে রংধনুর খেলা চলছে। পোলা তার বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে নানান আকারের বরফের ফুল তৈরি করছিল – তারা কেউ তারা-আকৃতির, কেউ বা হৃদয়ের মতো, আবার কেউ পাখির মতো দেখতে ছিল।
হঠাৎ, উত্তর মেরুর আলো ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে শুরু করল। যেন কেউ তাদের আলো নিভিয়ে দিচ্ছে! পোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখল, আকাশটা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। সে একটু চিন্তিত হলো, কারণ উত্তর মেরুর আলো কমে গেলে, শীতের দেশের সব প্রাণীর মন খারাপ হয়ে যায়।
ড্রাগন লায়ারের রাজা, বেয়ারন নামের এক ভাল্লুক, যিনি ছিলেন খুবই দয়ালু এবং জ্ঞানী, তিনি ঘোষণা করলেন, “প্রিয় বন্ধুগণ, উত্তর মেরুর আলো কমে যাচ্ছে! আমাদের অবশ্যই এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে।” বেয়ারন তার রাজকীয় সিংহাসনে বসে ছিলেন, তার মাথায় ছিল একটা সুন্দর মুকুট, আর হাতে ছিল মধু মাখানোর চামচ।
রোল্লো নামের একটি দ্রুতগতির, কমলা রঙের হেজহগ ছিল, যে সবসময় একটা ছোট্ট ফ্যানি প্যাক সাথে নিয়ে ঘোরে। রোল্লোর ফ্যানি প্যাকের মধ্যে থাকত নানান ধরনের স্ন্যাকস। রোল্লো ছিল খুবই সাহসী, আর সে সবসময় নতুন কিছু করতে ভালোবাসত।
বেয়ারন বললেন, “যে পারবে, সে-ই যাবে আলো ফিরিয়ে আনতে!”

তখনই পোলা, সাহস করে এগিয়ে এসে বলল, “আমি যাবো, মহারাজ!”
রোল্লো সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল, “আমিও যাবো! আমার ফ্যানি প্যাক ভর্তি স্ন্যাকস আছে, আর আমি খুব দ্রুত দৌড়াতে পারি।”
আলো কমে যাওয়ার কারণ খুঁজতে পোলা আর রোল্লো যাত্রা শুরু করল।
ফ্যাকাশে আলো আর লুকানো পথ (মাঝের অংশ)
পোলা আর রোল্লো তাদের যাত্রা শুরু করল। তাদের প্রথম গন্তব্য ছিল ড্রাগন লায়ারের গভীরে অবস্থিত একটি রহস্যময় গুহা। পথে তারা দেখল, ছোট ছোট সাদা ভাল্লুকছানাগুলো তাদের মায়ের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। পোলা তাদের দিকে এগিয়ে গেল, “তোমরা কি ভয় পাচ্ছো?”
ভাল্লুকছানাগুলো বলল, “হ্যাঁ, আমরা একা!”
পোলা তার জাদু দিয়ে তাদের জন্য বরফের কুঁড়ি তৈরি করলো, যেগুলো তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল তাদের মায়ের কাছে। রোল্লো তাদের পাশে থেকে উৎসাহ জুগিয়ে গেল।
গুহার মধ্যে, তারা দেখল বিশাল আকারের পাথরের টুকরোর উপর অদ্ভুত চিহ্ন খোদাই করা। রোল্লো বলল, “মনে হচ্ছে, এটা কোনো ধাঁধা!”

পোলা তার বরফের ফুল তৈরি করার ক্ষমতা ব্যবহার করে, পাথরের টুকরোগুলোর উপর আলো ফেলল। সাথে সাথে, চিহ্নগুলো আলো ঝলমলে হয়ে উঠল। তারা বুঝতে পারল, এই চিহ্নগুলো আসলে উত্তর মেরুর আলোর রহস্যের চাবিকাঠি।
তারা গুহার পথ ধরে এগিয়ে চলল। পথে তারা দেখল, বিশাল বরফের দেয়ালের ফাটলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পোলা তার বরফের ফুল তৈরি করার জাদু দিয়ে ফাটলগুলো বন্ধ করতে লাগল। রোল্লো তার দ্রুত গতির কারণে দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটতে লাগল, আর পোলাকে সাহায্য করতে লাগল।
অবশেষে, তারা এক বিশাল বরফের প্রাসাদে পৌঁছাল। প্রাসাদের ভিতরে ছিল এক বিশাল যন্ত্র, যা উত্তর মেরুর আলো তৈরি করত। কিন্তু যন্ত্রটি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা দেখল, যন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভেঙে গেছে।
পোলা আর রোল্লো বুঝতে পারল, উত্তর মেরুর আলো কমে যাওয়ার কারণ হল এই যন্ত্রের ক্ষতি। তাদের এখন এই যন্ত্রটিকে মেরামত করতে হবে।
জাদুকরী সমাধান আর উষ্ণ আলিঙ্গন (শেষ)
পোলা আর রোল্লো যন্ত্রটি মেরামতের জন্য লেগে পড়ল। পোলা তার বরফের ফুল তৈরির জাদু ব্যবহার করে ভাঙা অংশগুলো জোড়া লাগাল। রোল্লো তার ফ্যানি প্যাক থেকে সরঞ্জাম বের করে, পোলাকে সাহায্য করতে লাগল। তাদের বন্ধুত্বের জোরে, তারা কঠিন কাজটি করতে সফল হল।
যন্ত্রটি আবার চালু হলো। সাথে সাথে, উত্তর মেরুর আলো ঝলমলে হয়ে উঠল! আকাশে রংধনুর খেলা আবার শুরু হলো, আর পুরো ড্রাগন লায়ার আলোয় ঝলমল করতে লাগল।
পোলা আর রোল্লো তাদের সাফল্যের গল্প নিয়ে বেয়ারনের কাছে ফিরে এল। বেয়ারন তাদের বীরত্বের জন্য ধন্যবাদ জানালেন। তিনি তাদের জন্য এক বিশাল চা-পার্টির আয়োজন করলেন। সেখানে সবাই মিলে আনন্দ করল। পোলা, রোল্লো, আর বেয়ারন একসাথে বসে গল্প করতে লাগল। বেয়ারন পোলাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “তুমি আমার রাজ্যের গর্ব, পোলা!”
আকাশে, উত্তর মেরুর আলো আগের মতোই ঝলমল করতে লাগল। পোলা আর রোল্লো বুঝতে পারল, একসাথে কাজ করলে, যে কোনো সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। আর ভালো বন্ধু থাকলে, কোনো ভয় থাকে না। মিয়ার মনে হলো যেন, পোলা আর রোল্লোর বন্ধুত্বের গল্পটা তার নিজের পরিবারের মতোই সুন্দর।